img

ব্রেক্সিট বিলে রানির স্বাক্ষরের পর ইইউ নেতাদের স্বাক্ষর

প্রকাশিত :  ০৭:১০, ২৫ জানুয়ারী ২০২০

ব্রেক্সিট বিলে রানির স্বাক্ষরের পর ইইউ নেতাদের স্বাক্ষর

জনমত ডেস্ক: ব্রেক্সিট বিলে রানির সাক্ষরের পরই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হল। এবার অপেক্ষা শুধু ৩১ জানুয়ারির। বুধবার কোনও ধরনের পরিবর্তন ছাড়াই বিলটি পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে পাশ হয়। ব্রেক্সিট বিল নামে পরিচিত এই বিলের আনুষ্ঠানিক নাম ইইউ উইথড্রোয়াল বিল। বিলটি পার্লামেন্টের বাধা পার হওয়ার মধ্য দিয়ে ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছায়।

এদিকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিচ্ছেদ কার্যকরের চুক্তিতে (ব্রেক্সিট চুক্তি) আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ দুই নেতা—ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট আরসুলা ভনডার লিয়ন ও ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল। ৩১ জানুয়ারি ইউরোপের কেন্দ্রীয় সময় মধ্যরাতে (যুক্তরাজ্যে রাত ১১টা) ঘটছে আলোচিত এই বিচ্ছেদ।

আজ শুক্রবার ব্রাসেলসে ইউরোপা ভবনে কোনো রাখঢাক ছাড়াই তাঁরা বহুল আলোচিত এই বিচ্ছেদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে চার্লস মাইকেল বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে অনেক কিছুই বদলে যাবে। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ব টিকে থাকবে। অংশীজন এবং মিত্র হিসেবে আমরা নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছি।’

অন্যদিকে এক টুইট বার্তায় ভনডার লিয়ন বলেন, ‘চার্লস মাইকেল এবং আমি মাত্র ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ চুক্তিতে স্বাক্ষর করলাম। এতে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে চুক্তিটি অনুমোদনের পথ উন্মুক্ত হলো।’

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের পক্ষে চুক্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সাংবিধানবিষয়ক কমিটি ৬০০ পৃষ্ঠার এই চুক্তিটি অনুমোদন করে। আগামী বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে চুক্তিটির চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ার কথা।

২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত গণভোটে যুক্তরাজ্যের মানুষ ইইউ জোট ছাড়ার পক্ষে মত দেয়। সমঝোতার ভিত্তিতে এই বিচ্ছেদ কার্যকর করতে সাড়ে তিন বছর ধরে উভয় পক্ষকে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত ব্রেক্সিট চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থ হওয়ায় পদত্যাগে বাধ্য হন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। উত্থান ঘটে ব্রেক্সিটপন্থী নেতা বরিস জনসনের। ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিদায় নেন ইইউর দুই প্রভাবশালী নেতা জ্যঁ ক্লদ ইংয়কার এবং ডোনাল্ড ট্রাস্ক। চুক্তি সম্পাদনে ইইউর পক্ষে এই সমঝোতায় নেতৃত্ব দেন ইইউ কূটনীতিক মিশেল বার্নিয়ে। আজ চুক্তি স্বাক্ষরের যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে সেখানে দুই নেতার পেছনে বার্নিয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

চুক্তি অনুযায়ী ৩১ জানুয়ারি ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘ ৪৬ বছরের সম্পর্কের অবসান ঘটছে। দেনা-পাওয়া চুকাতে যুক্তরাজ্য ৩৩ বিলিয়ন পাউন্ড প্রদান করবে। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বাণিজ্যসহ বিদ্যমান অন্যান্য সম্পর্ক বজায় থাকবে। কিন্তু ইইউতে যুক্তরাজ্যের কোনো আসন আর থাকছে না। অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারির পর জোটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ব্রিটিশরা আর অংশ নিতে পারবেন না।

এই চুক্তিতে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত ইইউ নাগরিক এবং ইইউভুক্ত দেশে অবস্থানরত ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা, আয়ারল্যান্ড সীমান্ত ব্যবস্থাপনার মতো জটিল বিষয়গুলোতে একমত হয়েছে উভয় পক্ষ। চুক্তির পাশাপাশি এক যৌথ রাজনৈতিক ঘোষণাপত্রে বাণিজ্য, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্রুত নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে।

তবে এখনো চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের ঝুঁকি রয়ে গেছে। কেননা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের মেয়াদ না বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আইন করে মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি নিষিদ্ধ করেছেন তিনি। ইইউ নেতারা বলছেন, মাত্র ১১ মাসে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি প্রায় অসম্ভব। যুক্তরাজ্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির যে আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে, সেটির বিষয়েও সন্দিহান ইইউ নেতারা।

২৫ ফেব্রুয়ারি ইইউ নেতারা ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবেন। এরপরই যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হবে।

রানির স্বাক্ষর হওয়ার পরেই আইনটি কার্যকর হওয়ার সিদ্ধান্তে চুড়ান্ত শুল মোহর পড়ে। সেই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, একটা সময় মনে হয়েছিল কখনই হয়তো ব্রেক্সিট বিল পাশ করা সম্ভব হবে না। আমরা সেই অসাধ্যসাধন করেছি।’ ব্রেক্সিট বিল অনুযায়ী আগামী ৩১ জানুয়ারি স্থানীয় সময় রাত ১১ টায় ইইউর সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ কার্যকর হবে।

ব্রেক্সিট এর আরও খবর

img

অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি স্টেলার আহ্বান

প্রকাশিত :  ০৭:৩১, ০৭ জানুয়ারী ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লন্ডনের আদালতে উইকিলিকস-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তার জীবনসঙ্গী স্টেলা মরিস। বুধবার (৬ জানুয়ারি) অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১২ সালের জুন থেকে লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ২০১৯ সালের এপ্রিলে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাহার করে তাকে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে তুলে দেয় ইকুয়েডর। ওইদিনই তাকে জামিনের শর্ত ভঙ্গের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন ব্রিটিশ আদালত। এরইমধ্যে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কম্পিউটার হ্যাক ও গুপ্তচর আইন লঙ্ঘনসহ ১৮টি অভিযোগ দায়ের করা হয়। সোমবার (৪ জানুয়ারি) লন্ডনের একটি আদালতে অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণসংক্রান্ত মামলার রায় দেওয়া হয়। বলা হয়, তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া হবে না। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দুই সপ্তাহের মধ্যে আইনি যুক্তি উপস্থাপনের কথা জানিয়েছে তারা।

বুধবার (৬ জানুয়ারি) অ্যাসাঞ্জের জামিন আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দেন তার জীবনসঙ্গী স্টেলা মরিস। জামিন খারিজ হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি প্রচণ্ড হতাশার। জুলিয়ানের বেলমার্শ কারাগারে থাকা ঠিক হবে না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আমি আইন বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকেও আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা জুলিয়ানকে ক্ষমা করে দেয়।’

এর আগে গত এপ্রিলেও অ্যাসাঞ্জের জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিলেন স্টেলা মরিস। জামিন আবেদনের সঙ্গে দেওয়া এক বিবৃতিতে কীভাবে অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছিল তাও প্রকাশ করেছিলেন এ আইন গবেষক। মরিস জানান, অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে তার দেখা হয় ২০১১ সালে। তখন তাকে সুইডিশ আইন তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করতে বলা হয়েছিল। মরিস বিবৃতিতে লিখেছিলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জুলিয়ান ও আমার মধ্যে ভালো রকমের বুদ্ধিভিত্তিক ও আবেগী বন্ধন গড়ে ওঠে। আমরা একে অপরের সেরা বন্ধুতে পরিণত হই।’

প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও বন্ধুত্ব জোরালো হতে থাকে উল্লেখ করে মরিস জানান, তাদের দুই জনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে ২০১৫ সাল থেকে। লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে থাকার সময় তাদের দুটি সন্তানও হয়। তাদের একজনের নাম গ্যাব্রিয়েল, অপরজনের নাম ম্যাক্স। অ্যাসাঞ্জ যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা থেকে সন্তানদের আড়াল রাখতে চেয়েছিলেন বলে তখন জানান এ আইন বিশেষজ্ঞ।

ব্রেক্সিট এর আরও খবর