img

আপিল করবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ছুটিই থাকছে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত

প্রকাশিত :  ০৮:১৭, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

আপিল করবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ছুটিই থাকছে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত

দেশজুড়ে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদরাসার পাঠদান বৃহস্পতিবার (২ মে) পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

উচ্চ আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তবে আদালত বন্ধ থাকায় আপিল করা হবে না বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র। ফলে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্কুল-মাদরাসার ছুটি বহাল থাকছে। 

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের আপিল না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

এর আগে সোমবার (২৯ এপ্রিল) আদালতের আদেশের পর আপিল করা হবে বলে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। রাজধানীর আগারগাঁয়ে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, ‘সবকিছুতেই কেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর আদালতের নিদের্শনা নিয়ে আসতে হবে? সাংবিধানিকভাবে যার যা দায়িত্ব, তা পালন করা বাঞ্ছনীয়।’

এ নিয়ে  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের  বলেন, ‘আদালতের আদেশের কোনো কপি এখনো আসেনি। আর এ পরিস্থিতিতে আপিল করার সুযোগও নেই। কারণ উচ্চ আদালত বন্ধ।’

বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে সোমবার এ আদেশ দেন। আদেশে আদালত বলেছেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) রয়েছে, সেগুলোতে যথারীতি ক্লাস চলবে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার দিন ধার্য করা থাকে সেক্ষেত্রে সিডিউল অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

img

‘বাবাকে যে বাঙালিরা হত্যা করবে উনি কোনোদিন বিশ্বাস করেননি’

প্রকাশিত :  ০৯:৩৮, ১৭ মে ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১০:০৭, ১৭ মে ২০২৪

বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার বাবাকে যে বাঙালিরা হত্যা করবে উনিতো কোনোদিন বিশ্বাস করেননি। 

শুক্রবার (১৭ মে) শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গণভবনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণকালে তিনি একথা বলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বিদেশে দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন থেকে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফেরেন। এরপর থেকে শেখ হাসিনা গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দলটি সেই থেকে ১৭ মে সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করে।

শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এরপর দলটির সহযোগী এবং ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

সমবেত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নির্বাসিত জীবন, দেশে ফেরা ও পরবর্তী নানা ঘটনা তুলে ধরে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পূর্বে বিদেশে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশা করেছিলাম আমরা খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো। কিন্তু সেই ফিরে আসা আর হয়নি।’

আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি জানতাম না যে, আমাকে এতবড় একটা দায়িত্ব দেওয়া হবে। আমি কখনো এটা ভাবতে পারিনি।

ছোটবোন শেখ রেহানার বিয়েতে অংশ নিতে পারেননি বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু যখন তার বাচ্চা হবে, মিসেস গান্ধী আবার ক্ষমতায় এলেন, তিনি সব ব্যবস্থা করে দিলেন, আমি গেলাম। এরপর আবার দিল্লিতে ফেরত এলাম। তখন আমাকে লন্ডন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুবুর রহমান টেলিফোন করে বললেন আপনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। আমি তাকে বললাম আমি তো আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চাই না, আমাকে কেন করবে? আওয়ামী লীগের অনেক নেতা আছে।

১৯৮১ সালের ১৭ মে-এর ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সেদিন সাধারণ মানুষ সেখানে গিয়েছিল। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বক্তব্য রাখলাম, সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি যখন যাই তখন কামাল, জামাল, রোজি, খুকি সবাই বিমানবন্দরে ছিল। আমি যখন ফিরে এলাম হাজার হাজার মানুষ কিন্তু আমি পেলাম বনানীতে সারি সারি কবর।

তিনি বলেন, ৩২ নম্বরে আমরা মিলাদ পড়তে চাইলাম আমাকে ঢুকতে দেয়নি জিয়াউর রহমান। উল্টো বলেছিল বাড়ি দেবে, গাড়ি দেবে, সব দেবে। বলেছিলাম তার কাছ থেকে কিছু নেবো না। খুনির কাছ থেকে আমি কিছু নিতে পারি না। আমি যখন এলাম ৩২ নম্বরে ঢুকতে দেবে না, উল্টো বাড়ি-গাড়ি সাধবে, সেটাতো আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না।

দেশে ফিরে কোথায় উঠবেন, থাকবেন সেটা জানতেন না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু আমার পরার কাপড়-চোপড়, দুটো স্যুটকেস ও পুতুলকে (মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল) নিয়ে আমি চলে এসেছি। তারপর এ যাত্রা শুরু। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও দলকে গোছানোর চেষ্টা করেছি।

তিনি বলেন, আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেই, কিন্তু অত্যন্ত এটুকু বলতে পারি, তার বাংলাদেশ, কিছুটা হলেও তিনি যে আকাঙক্ষা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন এবং যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন কিছুটা হলেও সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।

১৫ আগস্টের ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এই ঘাতকের দল মনে হচ্ছিল একটি পরিবারকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করবে। শুধু পরিবার না আমাদের যারা আত্মীয়-স্বজন আছে তাদেরও। এসময় ৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যার ঘটনাও বর্ণনা করেন তিনি।

তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, সংগ্রাম করলেন সারাটা জীবন, সেই বাংলার মাটিতে, বাঙালির হাতেই তাদের মৃত্যুবরণ করতে হলো। তাও স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করা আর যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায়।

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার তো বিচার চাইবার অধিকার ছিল না। মামলা করতে গিয়েছি, মামলা নেবে না, করা যাবে না। কারণ খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছে, তাদের হিরো বানানো হয়েছিল।

১৯৭৫ পরবর্তী যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী-এমপি-উপদেষ্টা হয়েছিল বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ যারা করছেন তারাই অপরাধী হয়ে গেল। যারা বিরোধিতা করেছিল, গণহত্যা করেছিল তারাই ক্ষমতায়। ওই অবস্থায় দেশে ফিরেছিলাম। আমার তো কিছুই ছিল না। একটা বিশ্বাস ছিল দেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী। এরপর লড়াই-সংগ্রাম করে এইটুকু বলতে পারি পঞ্চমবারের মতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এসেছে।

আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের যদি রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা না থাকে, দেশপ্রেম না থাকে, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় না থাকে, তাহলে সেটা এগোতে পারে না। পঁচাত্তরে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছিল, দেশের কোনো উন্নতি করতে পারেনি। আজ আমরা বলতে পারি দেশটা বদলে যাওয়া, বদলাতে পেরেছি। সামনে আরও বদলাতে হবে। কারণ আমার বাবার একটাই স্বপ্ন ছিল দেশটাকে গড়ার। আমাদের পরিকল্পনা সেটাই আছে।

সুসংগঠিত আওয়ামী লীগ সংগঠন থাকায় করোনাভাইরাসহ সব দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দলের প্রত্যেকটা সংগঠন জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সমানতালে কাজ করেছে বলেই আমরা এ সাফল্যটা দেখাতে পেরেছি। তাছাড়া কোনোভাবে সম্ভব ছিল না। আওয়ামী লীগ সংগঠন ছাড়া দেশের জনগণের জন্য আত্মত্যাগ অন্য কেউ করে না।

আওয়ামী লীগের সংগ্রামের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, কারফিউ প্রতি রাতে মার্শাল ল, দেশের মানুষের কোনো আশা নেই, শুধু হতাশা। এই হতাশ জাতিকে টেনে তোলা যায় না। তাদের মাঝে আশার আলো জাগাতে হয়, ভবিষ্যৎ দেখাতে হয়, উন্নত জীবনের চিত্র তুলে ধরতে হয়। তবেই মানুষকে নিয়ে কাজ করা যায়। আমরা সেটাই করার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, সেদিন ফিরে এসেছিলাম, এতবড় দল পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা ছিল না, যখন ছাত্রলীগ করার সময় নেতা হওয়ার চেষ্টা করি নাই। দলের প্রয়োজনে যে দায়িত্ব দিয়েছে সেটাই পালন করেছি। কিন্তু যখন এ দায়িত্ব (আওয়ামী লীগ সভাপতি) পেলাম, এটা বড় দায়িত্ব। আজ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে শক্তিশালী বড় সংগঠন। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য দল আওয়ামী লীগ। প্রতিবার চক্রান্ত হয়, সেটা মোকাবিলা করে আমরা বেরিয়ে আসি। আমাদের তা ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে যে অধিকারগুলো আদায় করেছিল, সেটা আমরা সমুন্নত করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, কী পেলাম, না পেলাম সেই চিন্তা করেনি। ভবিষ্যৎ কী সেই চিন্তাও করি না। চিন্তা করি দেশের মানুষের ভবিষ্যৎটা আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলে দিয়ে যাবো। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

দলীয় নেতাদের তিনি বলেন, এটাই মনে রাখবেন একটা দল করি শুধু নেতা হওয়া না, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কী দিতে পারলাম, কী দিয়ে গেলাম। এটাই রাজনৈতিক মানুষের জীবনের বড় কথা। এই কথাটা মাথায় রাখতে পারলে দেশের মানুষের জন্য অনেক কিছুই করা যেতে পারে।

সংগঠনকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আর যেন যুদ্ধাপরাধী, খুনিরা যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে এই ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।