img

ইসরাইলে হামলা ইরানের, নীরবে পিছু হটছে যুক্তরাষ্ট্র!

প্রকাশিত :  ১০:২৩, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

ইসরাইলে হামলা ইরানের, নীরবে পিছু হটছে যুক্তরাষ্ট্র!

সিরিয়ায় কনস্যুলেটে হামলার জেরে ইসরাইলের মাটিতে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ইরান। ইরানের হামলার পর ইসরাইলের জন্য দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করলেও নীরবে পিছু টান দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

রোববার রাতের এই হামলায় তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়।

ইরানি হামলার পর নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ সময় তিনি নেতানিয়াহুকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইরানে সরাসরি কোনো হামলায় অংশ নেবে না যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি পাল্টা হামলায় সমর্থনও দেবে না মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আর উত্তেজনা চায় না। তবে ইসরাইলকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কঠোর ভাষায় ইরানি হামলার নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি জারি করেন।

তাতে তিনি বলেন, “আর উত্তেজনা  চায় না আমেরিকা। তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা এবং ওই অঞ্চলে মার্কিন কর্মীদের রক্ষায় ‘সমর্থন অব্যাহত রাখবে’।

তিনি আরও বলেন, আমি সামনের ঘণ্টা এবং দিনগুলোকে আঞ্চলিক এবং সারা বিশ্বের মিত্র ও অংশীদারদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ব্লিংকেনের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। তিনিও বলেছেন, ইসরাইলকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে দেশটি ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা আর বাড়াতে চাইছে না।

বাইডেন প্রশাসন এই বার্তার মাধ্যমে স্পষ্টতই নেতানিয়াহুকে পিছনে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

এর আগেও বাইডেন নেতানিয়াহুর কঠোর সমালোচনা করেছেন। এখন, ইরানের হামলার পরে, তিনি মৌখিকভাবে অনেক বেশি সমর্থন দিচ্ছেন, কিন্তু পর্দার আড়ালে ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বাইডেন নেতানিয়াহুকে ‍সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না।

এ সময় বাইডেন পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন কূটনীতি ব্যবহার করার কথা জানিয়েছেন। জোর দিয়ে বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণে সরাসরি জড়িত হবে না আমেরিকা। এভাবে বাইডেন প্রশাসন নেতানিয়াহু পিছনে ঠেলে দিচ্ছেন। 

সূত্র: আলজাজির

img

আইনে শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক

প্রকাশিত :  ০৯:০৬, ০১ মে ২০২৪

আজ মহান মে দিবস। পৃথিবীর ইতিহাসে এই দিনটি উজ্জ্বল হয়ে আছে। শ্রমিকের মর্যাদা রক্ষা ও ন্যায্য পাওনা আদায় তথা অধিকার আদায়ের দিন আজ। শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম আর সংহতির দিন। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকেরা আট ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছিলেন। সেই আত্মদানের পথ ধরেই পৃথিবীর দেশে দেশে শ্রমজীবী মানুষ ন্যায্য মজুরি, অবকাশ, মানবিক আচরণ, স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ কর্মপরিবেশের দাবিতে এখনো আন্দোলন করছেন।

বাংলাদেশের শ্রমিকেরাও এর বাইরে নন। নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবির পাশাপাশি এ দেশের শ্রমিকেরা প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে আছে, ‘রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব হইবে মেহনতী মানুষকে—কৃষক ও শ্রমিককে এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা।’ 

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও ন্যায্য দাবি আদায়ে শ্রমিকদের আন্দোলন করতে হচ্ছে, আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকে জেল–জুলুমেরও শিকার হয়েছেন। পূর্বাপর সরকারের ভুল নীতি ও দুর্নীতির কারণে অধিকাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপুলসংখ্যক শ্রমিক বেকার হয়েছেন। যদিও সংশ্লিষ্ট খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানে যেসব পদাধিকারী ছিলেন, তাঁরা বহাল তবিয়তে আছেন।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, তার পেছনে শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য। সরকার ও শিল্পমালিকেরা যদি এই উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে চান, তাহলে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি, চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের ঠকিয়ে কোনো শিল্প এগোতে পারে না। কিন্তু বাস্তবতা কী? দু–একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বেশির ভাগ খাতের শ্রমিকেরা চরমভাবে বঞ্চিত। দিনরাত পরিশ্রম করেও অনেকে পরিবার–পরিজন নিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকার ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছেন না। তৈরি পোশাকশিল্পসহ কয়েকটি খাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরিকাঠামো থাকলেও মূল্যস্ফীতির কারণে তাঁদের প্রকৃত মজুরি কমে গেছে।

বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) চলতি অধিবেশনে পশ্চিমা দেশগুলো প্রশ্ন তুলেছে। শ্রম অধিকারচর্চা, শ্রমিকদের ওপর হামলা-নির্যাতন বন্ধসহ শ্রম আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছে তারা।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ন্যূনতম মজুরি সবচেয়ে কম বাংলাদেশে। শ্রমিকদের কম মজুরি দিয়ে এবং অনিরাপদ কর্মপরিবেশে উপযুক্ত কাজ আশা করা যায় না। যেসব দেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দ্রুত ও টেকসই উন্নতি করেছে, সেসব দেশের শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরিও নিশ্চিত করা হয়েছে।

এবার মে দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক গড়ব দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’। স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হলে শ্রমিকদের জীবনমানও স্মার্ট করা জরুরি। দেশের অর্থনীতির সুষম বিকাশের স্বার্থে দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাপনের ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা প্রয়োজন। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতে যেসব শ্রমিক কাজ করছেন, তঁাদের সবার চাকরির নিশ্চয়তা থাকতে হবে।

বাংলাদেশে মে দিবস পালন তখনই সার্থক হবে, যখন শ্রমিকদের সব ধরনের শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্ত রাখা যাবে। মালিকদের মনে রাখতে হবে, শ্রমিকদের ঠকিয়ে শিল্পের বিকাশ বা বাড়তি মুনাফা করা যাবে না। শ্রমিক বাঁচলেই শিল্প বাঁচবে, আর শিল্প বাঁচলে দেশ বাঁচবে। আশা করি, এই মনোভাব নিয়ে সরকার ও শিল্পমালিকেরা কাজ করবেন এবং শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় সচেষ্ট থাকবেন।



মতামত এর আরও খবর