img

টাইপ টু ডায়বেটিসের সঙ্গে রয়েছে ঘুমের সম্পর্ক

প্রকাশিত :  ১৩:৪৯, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১৩:৫৭, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

টাইপ টু ডায়বেটিসের সঙ্গে রয়েছে ঘুমের সম্পর্ক

টাইপ টু ডায়বেটিসের সঙ্গে রয়েছে ঘুমের অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক। প্রতি রাতে যারা ছয় ঘণ্টার কম ঘুমান তাদের টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্যা ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে জামা নেটওয়ার্ক ওপেন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের বরাতে বলা হয়েছে, যারা প্রতিদিন ছয় ঘণ্টার কম সময় ঘুমান তাদের টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ১৬ শতাংশ। এই ক্ষতি স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করেও পূরণ করা যাবে না।

যুক্তরাজ্যের প্রায় দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার প্রাপ্তবয়স্কের উপর গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাতে সাত ঘণ্টার বেশি ঘুমান তাদের তুলনায় যারা তিন থেকে চার ঘণ্টা ঘুমান তাদের ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা ৪১ শতাংশ বেশি। যুক্তরাজ্যে আনুমানিক ৪.৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ টাইপ-টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং ১৩.৬ মিলিয়ন মানুষ তীব্র ঝুঁকিতে রয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাইপ-টু ডায়াবেটিস শরীরের চিনি বা গ্লুকোজ প্রক্রিয়ার ক্ষমতায়কে প্রভাবিত করে এবং শরীরে ইনসুলিন শোষণে বাধা দেয়; যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। সময়ের সাথে সাথে এটি গুরুতর শারীরিক ক্ষতি করতে পারে, বিশেষ করে স্নায়ু এবং রক্তনালির।

 যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাঙ্কে সংরক্ষিত ২ লাখ ৪৭ হাজার ৮৬৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুসের চিকিৎসা এবং জীবনযাত্রার ১২ বছরের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণাটি করা হয়েছে।

এতে গবেষকরা দেখেছেন, যারা স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন, সপ্তাহে দুইবারের কম লাল মাংস, প্রতিদিন চার চামচের বেশি শাকসবজি, প্রতিদিন দুই বা তিন টুকরার বেশি ফল গ্রহণ করেন এবং সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন মাছ খান, এমন ৭,৯০৫ জনের টাইপ-টু ডায়াবেটিস দেখা দিয়েছে।

সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষক ক্রিশ্চিয়ান বেনেডিক্ট বলেন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস মেনে চলা ব্যক্তিদের টাইপ-টু ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ২৫ শতাংশ কম এবং যারা এই খাদ্যাভাস মেনে চলেছেন কিন্তু ৬ ঘণ্টার কম ঘুমিয়েছেন তাদের আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা বেশি।



img

ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে সচেতন হতে হবে এখনই

প্রকাশিত :  ১০:১৮, ০৫ মে ২০২৪

দাবদাহের কাল গ্রীষ্ম শেষ হলেই শুরু হবে বর্ষা। সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে ডেঙ্গুর প্রকোপ। কারণ, বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময় রোগটির প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। অসচেতনতা এবং আক্রান্ত অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা না থাকার ফলে ডেঙ্গু অনেক সময় প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে। তাই ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সবাইকে সম্যক সচেতন হয়ে উঠতে হবে।

 লক্ষণ ও ধরন

সাধারণত এডিস মশা কামড়ানোর তিন থেকে দশ দিনের মধ্যে এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। প্রধানতম লক্ষণ হচ্ছে উচ্চমাত্রার জ্বর। কখনো কখনো এ মাত্রা ৯৯হ্ন থেকে ১০৪হ্ন ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে যায়। এ ছাড়া নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দেয়-

▶ শরীরে প্রবল ক্লান্তি, সারা দিন অবসন্ন লাগা।

▶ শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যার পাশাপাশি বুকে ব্যথা।

▶ শরীর বা মাথায় তীব্র ব্যথা হতে পারে।

▶ পেটে ব্যথা হতে পারে।

▶ বমিভাব বা অনবরত বমিও হয়ে থাকে।

▶ দাঁতের মাড়ি, নাক দিয়ে রক্ত বের হতে পারে। বমি বা মলের সঙ্গেও রক্ত আসতে পারে।

▶ প্রস্রাবে সমস্যা হয়। ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা ধরে প্রস্রাব না হওয়া বা খুবই অল্প পরিমাণে প্রস্রাব হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। কোনো নারীর পিরিয়ড চলাকালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে অতিরিক্ত রক্তপাত হয়ে থাকে।

▶ ত্বকে লালচে ছোপ, র্যাশ বা ফুসকুড়ি উঠা।

▶ খাবারে অরুচি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

তবে ডেঙ্গুর ধরন অনুযায়ী এসব লক্ষণের ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায়। আমাদের দেশে সাধারণত দুই ধরনের ডেঙ্গু দেখা যায়-ক্ল্যাসিকাল ও হেমোরেজিক।

 ক্ল্যাসিকাল ডেঙ্গু : এ ধরনের ডেঙ্গুতে খুব একটা জটিলতা হয় না। মশার কামড়ের তিন থেকে ১৪ দিনের মাথায় তীব্র জ্বর শুরু হয়। তবে দ্রুতই এ জ্বর সেরে যায় এবং রোগী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন।

হেমোরেজিক ডেঙ্গু : হেমোরেজিক ডেঙ্গু বা শকজনিত জ্বর ডেঙ্গুর ভয়াবহ পর্যায়। দ্রুত না সারলে পরিস্থিতি খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার দিকে যেতে থাকে। এক্ষেত্রে রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রক্তনালিতে ছিদ্র হয়ে যায়। তখন দ্রুতহারে প্লাটিলেট (রক্ত জমাট বাঁধার কোষ) কমে যেতে থাকে। ফলে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয় এবং অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। এমনকি রোগী মারা যেতে পারেন। ডেঙ্গুজ্বরে মৃত্যুর প্রধান কারণ এই হেমোরেজিক ডেঙ্গু।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

জ্বর হলেই যে তা ডেঙ্গু, বিষয়টি এমন নয়। ডেঙ্গু হয়েছে কিনা প্রথমে তা নিশ্চিত হতে হবে। এজন্য পরীক্ষা করাতে হবে। নিজে নিজে পরীক্ষা না করে বিষয়টি চিকিৎসকের ওপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো। লক্ষণ-উপসর্গ দেখে চিকিৎসকরা জ্বর শুরুর প্রথম দিকে ডেঙ্গু এনএস১ অ্যান্টিজেন পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। তবে জ্বর যদি চার-পাঁচ দিন পেরিয়ে যায় সেক্ষেত্রে ডেঙ্গু আইজিএম অ্যান্টিবডি টেস্ট দেওয়া হয়। অ্যান্টিজেন পরীক্ষার পাশাপাশি শ্বেতরক্তকণিকা, হিমাটোক্রিট, অণুচক্রিকা প্রভৃতি টেস্ট করাও দরকার হয়।

হাসপাতালে যাবেন কখন 

ডেঙ্গু ভাইরাস মোটামুটি শরীরের সব অঙ্গকেই আক্রমণ করার ক্ষমতা রাখে। এতে আক্রান্ত হলে হার্ট, কিডনি, যকৃৎ কিংবা মস্তিষ্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর কর্মক্ষমতা নষ্ট হতে পারে। এতে মৃতুহারও বাড়ে। সুতরাং রক্তের শ্বেতকণিকা পাঁচ হাজারের নিচে এবং প্লাটিলেট এক লাখের নিচে নেমে যাওয়ার পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

সতর্কতা

▶ ডেঙ্গু প্রতিরোধে বৃষ্টির মৌসুমে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। বাড়ি বা কর্মস্থলের আশপাশে মশার উপদ্রব যেন বাড়তে না পারে তার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

▶ বাড়ির আঙিনা, ছাদ, ব্যালকনিতে সবজি বা গাছ লাগালে সেসব জায়গা পরিচ্ছন্ন রাখুন। কোথাও যেন বৃষ্টির পানি আটকে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

▶ এডিস মশা সাধারণত সূর্যোদয়ের পরে ও সূর্যাস্তের আগে কামড়ায়। এ সময় বাইরে অবস্থান করলে ফুলহাতা জামা, প্যান্ট পরিধান করুন।

▶ ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে ঘুমাবেন। সম্ভব হলে ঘরের জানালায় নেট লাগিয়ে নিতে পারেন।

▶ নিয়মিত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাবেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার বিকল্প নেই।

▶ ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করুন। ধূমপান রক্তের উপাদানে তারতম্য তৈরি করে।