img

২৯ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড

প্রকাশিত :  ১৪:৩২, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১৭:৩৮, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

২৯ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড

বাংলাদেশে এবারের মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সোমবার। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এর আগে, ১৯৯৫ সালের পহেলা মে দেশটির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই বছরের ২৫ এপ্রিল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ ডিগ্রি।

আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ওই দুটি শীর্ষ তাপমাত্রাও পাওয়া গিয়েছিল চুয়াডাঙ্গাতেই।

তিনি আরো বলেন, ১৯৮৯ সালেও একবার ৪৩ ডিগ্রি ছাড়িয়েছিল জেলাটির তাপমাত্রা। ওই বছরের ৪ মে তাপমাত্রা ৪৩.৩ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়।
এই নিয়ে ৪০ বছরে চারবার থার্মোমিটারের পারদ এই মাত্রা স্পর্শ করেছে।


এদিকে, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও মাদরাসা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

আদালতের নির্দেশনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের আলাদা ঘোষণা আসে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর তরফে।

আবার বন্ধ স্কুল-কলেজ
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, চলমান তীব্র তাপদাহের কারণে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অধীনে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারসমূহকেও এই নির্দেশনার অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

আর, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সকল মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এছাড়া, ঢাকা বিভাগের ঢাকা, টাঙ্গাইলসহ সাত জেলা, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর এবং বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালীর স্কুল-কলেজের জন্যও এই নির্দেশনা প্রযোজ্য।

এর আগে, প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঈদ ও নববর্ষ উপলক্ষে ছুটি ছিল ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত। ২১ এপ্রিল থেকে স্কুল-কলেজ খোলার কথা থাকলেও ছুটি আরো এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়।

কারণ, টানা তাপপ্রবাহে দেশের কোনো কোনো স্থানে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

গতকাল ২৮ এপ্রিল শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও আজ সোমবার পাঁচ জেলার হাইস্কুল-কলেজ ছুটি দেয়া হয়েছে। অবশ্য খোলা রাখা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়।

তবে, সারাদেশের একই রকম সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের একজন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ।

লেখক ও গবেষক গওহার নঈম ওয়ারা বলেন,‘ঢাকাকে দিয়ে সারাদেশকে বিচার করা হচ্ছে। সব জায়গায় আবহাওয়া পরিস্থিতি একই রকম নয়।’

যেসব জায়গায় গরমের তীব্রতা বেশি সেখানে বন্ধ রেখে, যেখানে তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত সহনীয় সেসব স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা উচিত ছিল বলে মনে করেন নঈম ওয়ারা।

‘হিট অ্যালার্ট' চলছে
সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় প্রকাশিত আবহাওয়া অধিদফরের বুলেটিন থেকে জানা যাচ্ছে, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

আর তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে।

এছাড়া আরো অনেকগুলো জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের যে তাপপ্রবাহ বইছে তা অব্যাহত থাকতে পারে।

এ কারণে, গতকাল বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর নতুন করে আরো তিন দিনের জন্য ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করেছে। সংস্থাটি জানায়, এই তিন দিনে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।

মঙ্গলবারও বিরাজমান এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। তবে এরপর বৃষ্টিপাত ভালো করে হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতেও পারে।

আবহাওয়া অধিদফতরের সূচক অনুযায়ী, ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়।

৩৮ থেকে ৩৯.৯ মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১.৯ তীব্র তাপপ্রবাহের অন্তর্ভুক্ত।

তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়ে গেলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়।

গরম সামাল দেয়ার যত চেষ্টা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের না হয় বাইরের গরম থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে। কিন্তু, দৈনন্দিন জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে বিপুল সংখ্যক মানুষকে প্রতিদিন প্রকট সূর্যতাপ মাথায় নিয়ে নামতে হচ্ছে পথে।

তারা কীভাবে পাল্লা দিচ্ছেন ঊর্ধ্বমুখী তাপমাত্রার সাথে?
গরমে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে রিকশাচালক, নির্মাণ শ্রমিকসহ অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষদের।

উত্তপ্ত পিচগলা রোদে সাধারণ পথচারীদের কষ্টও কম নয়।

তাদের জন্য কিছু ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

ঢাকার পথচারীদের জন্য কোথাও কোথাও পানির ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয়রা। বাসাবাড়ির দেয়ালের বাইরে ছোট পানির জার বা ট্যাংক বসিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। কিংবা পাইপ টেনে দেয়া হয়েছে যাতে তৃষ্ণার্ত কেউ প্রয়োজনমত পানি সংগ্রহ করতে পারেন।

বিভিন্ন স্থানে জনপ্রতিনিধি বা স্থানীয় সরকার প্রশাসনের তরফে রিকশাচালকসহ অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষের জন্য পানি, স্যালাইন, ক্যাপ, ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের জেলা ফেনীতে, ফেনী পৌরসভার উদ্যোগে শহরে কয়েকটি জায়গায় পানির ট্যাংক বসানো হয়েছে।

এছাড়া, শহরে কর্মরত শ্রমজীবীদের মাঝে পানির বোতল ও স্যালাইন বিতরণ করা হয়।

ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল হোসেন স্বপন মিয়াজী বলেন,‘পৌরসভার বৈঠকের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যে, যতদিন তাপের তীব্রতা থাকবে ততদিন এ কার্যক্রম চালানো হবে।’

প্রথম দিকে অবশ্য আইসক্রিম এবং ঠান্ডা পানি বিতরণ করা হয়েছিল।

কিন্তু, তীব্র গরমে আকস্মিক ঠান্ডা পানি বা আইসক্রিম গ্রহণের ঝুঁকির বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে ঠান্ডাজাতীয় সামগ্রী বিতরণ থেকে সরে আসেন বলে জানান মিয়াজী।

রাজধানী ঢাকায়ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা ব্যক্তিকে পানি বিতরণ করতে দেখা গেছে।

এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও দু' একটি উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো। যেমন আইনজীবীদের পোশাকের বাধ্যবাধকতা শিথিল করা হয়েছে।

আইনজীবীদের প্রচলিত পোশাক সাদা শার্টের ওপর কালো কোট বা গাউন। যা আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত অন্য মানুষদের তুলনায় তাদের স্বাতন্ত্র্য প্রকাশ করে।

কালো কোট পরে আদালতে উপস্থিত হবার বিষয়টি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনে রয়েছে। যে কোনো আইনজীবী চাইলেই তার নিজের ইচ্ছেমতো পোশাক পরে আদালতে উপস্থিত হতে পারেন না।

তবে, গত পাঁচই এপ্রিল অধস্তন আদালতে কোট ও গাউন পরার বাধ্যবাধকতা শিথিল করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া ‍পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকার কথা বলা হয়।

এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তীব্র তাপদাহের কারণে বিচারকরা এবং আইনজীবীরা ক্ষেত্রমতে সাদা শার্ট বা সাদা শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ এবং সাদা নেক ব্যান্ড বা কালো টাই পরিধান করবেন।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো: গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ক্ষেত্রে কালো কোট এবং গাউন পরিধান করার বাধ্যবাধকতা নেই।

সূত্র : বিবিসি

যুক্তরাজ্য এর আরও খবর

ইংলিশ চ্যানেলে নৌকা ডুবে শিশুসহ নিহত ৫ | JANOMOT | জনমত

img

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও নারী উদ্যোক্তাদের ৫০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে ব্রিটেন

প্রকাশিত :  ১১:১৯, ১৪ মে ২০২৪

ব্রিটেনের আর্থিক উন্নয়ন সংস্থা (ডিএফআই) ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট (বিআইআই) ‘প্রভাব বিনিয়োগ’ ছোট ব্যবসা এবং নারী উদ্যোক্তাদের সমর্থন দিতে বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় এসএমই ব্যাংক ব্র্যাক ব্যাংককে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে।

এই ঋণটি ক্ষুদ্র এবং ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ এবং নারী নেতৃত্বাধীন ব্যবসার বৃদ্ধিকে সমর্থন দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তহবিল সরবরাহ করবে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি।

মঙ্গলবার ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিআইআই’র একথা বলা হয়েছে।

ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক এই অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই বিনিয়োগ বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই উন্নয়নে সহায়তার জন্য যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুতিকে শক্তিশালী করেছে এবং এটি বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাজ্যের আধুনিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের একটি বড় নিদর্শন।’

তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং নারী উদ্যোক্তাদের আরও অর্থনৈতিক সুযোগ গ্রহণ করতে এবং আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম করবে।

বাংলাদেশে প্রায় ১০ মিলিয়ন এমএসএমই রয়েছে। এতে জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশকে নিযুক্ত রয়েছে এবং দেশের শিল্প উৎপাদনের অর্ধেক এই খাত থেকে আসে।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং দারিদ্র্য নিরসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে এই অর্থয়নকে অপরিহার্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

ব্র্যাক ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, এই ধরণের অর্থায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে দেশের মোট ঋণের মাত্র ২০ শতাংশ নারী-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসহ এসএমইতে যাচ্ছে।

বিআইআই’র ঋণের অর্ধেক এমএসএসই খাতে যাবে এবং অবশিষ্টাংশ অর্ধেক নারী উদ্যোক্তাদের কাছে যাবে। যাতে মোট ৩ হাজার ৫শ’এমএসএসই এবং নারী উদ্যোক্তাদের কাছে পৌঁছানো হবে, যাতে তাদের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই বিনিয়োগকালীন কাজ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য লিঙ্গ সমতার ওপর জাতিসংঘের ইউএন এসডিজি ৫, এসডিজি  ৮ সমর্থন দেবে। সেইসাথে শিল্প, উদ্ভাবন এবং অবকাঠামোতে এসডিজি ৯ সমর্থন করে।