img

প্রেমিককে গাছে বেঁধে প্রেমিকাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ১

প্রকাশিত :  ১০:৩৯, ১৩ মার্চ ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১১:৩৭, ১৩ মার্চ ২০২৪

প্রেমিককে গাছে বেঁধে প্রেমিকাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ১

সুনামগঞ্জে প্রেমিককে গাছে বেঁধে প্রেমিকাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-৯।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রাত ১০টার দিকে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত মো. আব্দুল করিম (৩২) সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার কামারগাঁওয়ের ইদ্রিছ আলীর ছেলে। তিনি পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক।

জানা গেছে, গত শুক্রবার (৮ মার্চ) রাতে দোয়ারাবাজারের মান্নারগাঁও ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামে প্রেমিককে গাছে বেঁধে তার কিশোরী প্রেমিকাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের চারজনের একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। ঘটনার পরদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে দোয়ারাবাজার থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

ভুক্তভোগী কিশোরীর পরিবার জানায়, রাজমিস্ত্রি নুরুজ্জামানের (২৩) সঙ্গে ১৬ বছরের ওই কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। বিয়ের জন্য শুক্রবার নুরুজ্জামানের সঙ্গে হবিগঞ্জের মাধবপুরের বাড়ি থেকে বের হয় সে। এরপর সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের কামারগাঁওয়ে নুরুজ্জামানের বন্ধু আফাজ উদ্দিনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় তারা।

সন্ধ্যায় দোয়ারাবাজারের আজমপুর খেয়াঘাটে একই গ্রামের অটোরিকশাচালক আব্দুল করিমের সঙ্গে তাদের কথা হয়। আব্দুল করিম তাদেরকে আফাজ উদ্দিনের বাড়ি পৌঁছে দেবেন বলে জানান। কথামতো রাতে সেখান থেকে অটোরিকশায় তারা রওনা দেন।

পথে গ্যাস নেই জানিয়ে অটোরিকশা থামিয়ে মান্নারগাঁও ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফছর উদ্দিনকে (৩৫) ডেকে আনেন চালক। আফছর উদ্দিন প্রেমিক-প্রেমিকাকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে অসামাজিক কাজের অভিযোগ তুলে পুলিশে সোপর্দ করার ভয় দেখান।  এরপর পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে নিয়ে প্রেমিককে গাছের সঙ্গে বেঁধে আফছর উদ্দিন, ফয়জুল বারী (৪৫), আব্দুল করিম (৩৫) ও জালালপুরের হায়াত আলীর ছেলে ছয়ফুল ইসলাম (৩০) ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন।

এ ঘটনার পর একই অটোরিকশায় তুলে প্রেমিক-প্রেমিকাকে কিছু দূর নিয়ে ফেলে রেখে যান অভিযুক্তরা। সেখানে একজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন ভুক্তভোগীরা। পরদিন সকালে পুলিশের সহযোগিতা চান তারা।

এদিকে, ঘটনার পর ছায়াতদন্ত শুরু করে র‍্যাব-৯। ঘটনার ৪ দিন পর অটোরিকশাচালক আব্দুল করিম গ্রেপ্তার হলেও আওয়ামী লীগ নেতাসহ বাকি আসামিরা এখনো ধরাছোয়ার বাইরে। তবে তাদেরও ধরতে তৎপরতা জোরদার রেখেছে বলে জানিয়েছে র‍্যাব-৯।  

 আসামি আব্দুল করিমকে গ্রেপ্তারের পর সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

img

শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদ : এক অত্যুজ্জ্বল আলোকবর্তিকা

প্রকাশিত :  ২১:২৩, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
সর্বশেষ আপডেট: ১০:০৩, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

বৃহত্তর সিলেটে যেসব কীর্তিমান জ্ঞানের আলো বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করে আজও অমর হয়ে আছেন তাঁদের মধ্যে মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদ একটি প্রাতঃস্মরণীয় নাম, এক অনন্যসাধারণ প্রতিভা।  শিক্ষাবিদ, একাধিক ভাষায় পণ্ডিত, বহু গ্রন্থ প্রণেতা হিসেবে তার নাম সর্বাগ্রে উচ্চারণীয়। স্কুল-কলেজে শিক্ষালাভ ও শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি আরবি সাহিত্যে যে পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন তা আজকালকার যে কোনো শিক্ষানুরাগীকে বিস্মিত করে তুলবে।

জকিগঞ্জের মানিকপুর ইউনিয়নের হাজারীচক গ্রামে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে এক সম্ভ্রান্ত তালুকদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদ। তাঁর পিতার নাম মোআব্দুছ ছোবহান এবং মাতা ফজিলাতুন নেছা।

শিক্ষা জীবন

শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদ এর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় নিজ গ্রাম হাজারীচকের পাঠশালা এবং রাহাতপুর (বর্তমান ভারতপ্রাইমারী স্কুলে। তিনি মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত কৃতিত্বের সাথে অধ্যয়ন সম্পন্ন করেছেন করিমগঞ্জ সরকারি হাই স্কুলে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েই তার সুপ্ত প্রতিভার স্ফূরণ ঘটতে থাকে। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে এফএ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় স্থান লাভ করে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য তাকে শ্রীভূমি ত্যাগ করে ওপার বাংলায় পাড়ি জমাতে হয়। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদ কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিএ পাশ করে শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন।

কর্মজীবন 

অনুসন্ধিৎসা ও দুর্দমনীয় শিক্ষানুরাগ নিয়ে তিনি একজন শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে শিলচর সরকারি স্কুলে সহাকারি শিক্ষক পদে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর শিক্ষকতার শুরু। এরপর ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্কুল ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফেঞ্চুগঞ্জকানাইঘাটজৈন্তাপুর  বানিয়াচং প্রভৃতি স্থানে স্কুল ইন্সপেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে শিলচর গভর্নমেন্ট নরমাল স্কুলে (টিচার্স ট্রেনিংসুপারিন্টেন্ডেন্ট পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশবিভাগ পর্যন্ত সুনামের সাথে  পদে দায়িত্ব পালন করেন।

শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদের পরিবার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সিলেট শহরের পীর মহল্লা মসজিদ
দেশভাগের পরপরই (১৯৪৭তিনি মৌলবীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। উল্লেখ্য যে, তিনি ছিলেন  স্কুলের প্রথম মুসলিম প্রধান শিক্ষক । ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের শেষদিক পর্যন্ত তিনি বড়লেখা পিসি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এখানেই তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক কর্মজীবনের ইতি ঘটে।
শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদের দানকৃত জমিতে প্রতিষ্ঠিত হাজারীচক মসজিদ

একজন আদর্শ শিক্ষক ও শিক্ষা ইন্সপেক্টর হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বাংশে সফল। তাঁর হাজারো ছাত্রের তালিকায় অনেক কীর্তিমানের নামও রয়েছে, যারা যোগ্য শিক্ষকের সুযোগ্য ছাত্র হিসেবে দেশ ও জাতির বহুবিদ কল্যাণ সাধন করে গেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনসাবেক ডিআইজিএমপি  ভূমিপ্রশাসন মন্ত্রী এমএ হকসাবেক এমপিে এবং অর্থ  পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানসাবেক এমপি  পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদসাবেক সচিব  এমপি ব্রিগেডিয়ার (অব:) এমআর মজুমদারহাফিজ মজুমদার প্রমুখ।

প্রকাশিত গ্রন্থ

ভূমিকায়ই উল্লেখ করেছি, একজন জেনারেল শিক্ষিত হয়ে আরবি সাহিত্যে তাঁর দক্ষতার কথা, যা স্বীয় ধর্মনিষ্ঠা ও পারিবারিক ধর্মানুরাগকেই পরিস্ফুটিত করে। মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদ বেশ কয়েকটি ইসলামি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। তাঁর রচিত ইসলামি বইসমূহ দ্বীনের প্রাথমিক স্তম্ভ হিসেবে মুমিন মুসলিমগণের ইবাদতের পরিশুদ্ধতা ও ঈমানের দৃঢ়তার বাহক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। সে সময় বাংলা ভাষায় ইসলামি গ্রন্থ প্রণয়ন ছিলো খুবই সীমিত। তাঁর সে গ্রন্থসমূহ আজও কালের সাক্ষী হয়ে ঠিকে আছে। শিক্ষাবিদ, পণ্ডিত মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদ প্রণীত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হচ্ছে:

 . আল কাওয়াইদুল আরাবিয়্যা মাআ সুওয়ারিল কুরআন ওয়াল আদইয়াতিদ দারুরিয়্যাহ,

প্রকাশক : সাজিদ আলী চৌধুরীকরিমগঞ্জভারত। প্রকাশকাল : ১৯৩০।

 . জালালী কায়েদাহ,

প্রকাশক : সৈয়দা রাইছুন্নেছাপ্রকাশকাল১৯৮১।

 . মুফিদুল মুছাল্লীন , প্রথম খণ্ড,

 . মুফিদুল মুছাল্লীনদ্বিতীয় খণ্ড (ঈমান  আকাঈদসহ জরুরি বিষয়াদি।)

প্রকাশক : মোআবদুর রবপ্রকাশকাল: (২য় সংস্করণ) ১৯৮০।

 . মুফিদুল মুছাল্লীনতৃতীয় খণ্ড ( সিরাজুস সালাত )

প্রকাশক : মোআবদুর রবপ্রকাশকাল: (৯ম সংস্করণ) ১৯৭২। 

 . মুফিদুল মুছাল্লীন৪র্থ খণ্ড (আরকানে আরবাআ),

প্রকাশক : মোআবদুর রবপ্রকাশকাল: (৯ম সংস্করণ) ১৯৭৩।

এছাড়া মুফিদুল মুছাল্লীন ৫ম৬ষ্ঠ  ৭ম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিলো বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য  এগুলোর প্রকাশিত কোন কপি সংগৃহীত হয় নি।

সংসার জীবন

সংসার জীবনেও সফল ছিলেন এই কর্মবীর। তাঁর সহধর্মিণীর নাম সৈয়দা রাইসুন নেসা (মরহুমা ১৯৯৯)। তিনি চার পুত্র  তিন কন্যা সন্তানের জনক। তাঁরা সবাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত। তাঁর পরিবার সিলেট শহরের স্থায়ী বাসিন্দা।

মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদের সন্তানদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আব্দুল বাকীই শুধু বর্তমানে জীবিত আছেন। বড় ছেলে মরহুম মোহাম্মদ আব্দুল হাই ইউকে প্রবাসী ছিলেন (১৯৯৮), মেজো ছেলে মরহুম প্রিন্সিপাল আব্দুর নূর (২০১৭), তৃতীয় ছেলে মরহুম ডাক্তার আব্দুর রব (২০১৯) এবং চতুর্থ ছেলে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বাকী (জীবিত)।

উল্লেখ্য, শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদ এর পৌত্র, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আব্দুল বাকীর কনিষ্ঠ সন্তান বর্তমান ব্রিটিশ বাংলা টাইমস (বিবিটি) এর সম্পদক তৌহিদ আহমেদ।

বহু প্রতিভার অধিকারী, মহান লেখক  শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদ ২৭ শে এপ্রিল ১৯৮৩ সালে ৯৩ বছর বয়সে সিলেটের পশ্চিম পীর মহল্লায় তার নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।

পরিশেষে বলা যায়, অনন্য সাধারণ প্রতিভার অধিকারী মোহাম্মদ আব্দুছ ছমদ নিজের কর্মের মাঝে আজও মহীয়ান। তিনি নিজেই যেন এক আলোকরশ্মি। তাঁর আজীবন শিক্ষকতা ও ধর্মীয় ইবাদত-আকিদামূলক গ্রন্থ প্রণয়ন আমাদের সমাজে জ্ঞানের অত্যুজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।

সিলেটের খবর এর আরও খবর